তুঘলক বংশ (1320-1414 খ্রিস্টাব্দ): দিল্লি সুলতানাতের তৃতীয় রাজবংশ
ঐতিহাসিক পটভূমি ও প্রতিষ্ঠা
খিলজি বংশের পতনের পর গিয়াসউদ্দিন তুঘলক 1320 খ্রিস্টাব্দে তুঘলক বংশ প্রতিষ্ঠা করেন। এই বংশের শাসনামলে দিল্লি সুলতানাত তার সর্বাধিক বিস্তার লাভ করে, কিন্তু কিছু বিতর্কিত নীতি-র কারণে পতনও ত্বরান্বিত হয়।
গুরুত্বপূর্ণ সুলতান ও তাদের অবদান
১. গিয়াসউদ্দিন তুঘলক (1320-1325 খ্রিস্টাব্দ)
প্রতিষ্ঠাতা যিনি তুঘলকাবাদ শহর নির্মাণ করেন (দিল্লির কাছে)।
অবদান:
কৃষি উন্নয়ন: খাল ও সেচ ব্যবস্থা চালু।
ন্যায়বিচার: কঠোর কিন্তু ন্যায়পরায়ণ শাসক।
মৃত্যু: একটি ষড়যন্ত্রমূলক দুর্ঘটনায় (তাঁর পুত্র মুহাম্মদ বিন তুঘলক-এর হাতে?)।
২. মুহাম্মদ বিন তুঘলক (1325-1351 খ্রিস্টাব্দ)
সবচেয়ে বিতর্কিত শাসক, যিনি উদ্ভট সংস্কার-এর জন্য কুখ্যাত।
সংস্কার ও ব্যর্থতা
সংস্কার | ব্যর্থতার কারণ |
---|---|
রাজধানী স্থানান্তর (দিল্লি → দৌলতাবাদ) | দূরত্ব ও যোগাযোগের অসুবিধা |
টোকেন কারেন্সি (তামার মুদ্রা) | জাল মুদ্রার প্রচলন → অর্থনৈতিক সংকট |
কর বৃদ্ধি (দোয়াব অঞ্চলে) | কৃষক বিদ্রোহ (ভারতের প্রথম কৃষক বিদ্রোহ?) |
ইতিবাচক পদক্ষেপ:
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: চীন, ইরান ও মিশরের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক।
ধর্মীয় সহিষ্ণুতা: হিন্দু পণ্ডিতদের পৃষ্ঠপোষকতা।
৩. ফিরোজ শাহ তুঘলক (1351-1388 খ্রিস্টাব্দ)
জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য বিখ্যাত।
অবদান:
প্রশাসনিক সংস্কার:
দাস প্রথা পুনরুজ্জীবিত করেন (১,৮০,০০০ দাস!)।
কর ব্যবস্থা সহজীকরণ (ইসলামিক নীতিমালা অনুসরণ)।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন:
১২০০+ বাগান ও খাল নির্মাণ (যেমন: যমুনা নহর)।
হাসপাতাল (দার-উশ-শিফা) ও মাদ্রাসা স্থাপন।
স্থাপত্য:
ফিরোজ শাহ কোটলা (দিল্লি), হিসার-ই-ফিরোজা শহর নির্মাণ।
তুঘলক বংশের পতনের কারণ
মুহাম্মদ বিন তুঘলকের ব্যর্থ নীতি: অর্থনৈতিক ধ্বংস।
ফিরোজ শাহের দুর্বল সামরিক নীতি: প্রদেশগুলি স্বাধীন হতে শুরু করে।
তৈমুর লং-এর আক্রমণ (1398): দিল্লি লুণ্ঠন ও ধ্বংস।
সৈয়দ বংশের উত্থান (1414)।