দিল্লি সুলতানাতের প্রতিষ্ঠা (1206-1526 খ্রিস্টাব্দ)
পরিচিতি ও ঐতিহাসিক পটভূমি
দিল্লি সুলতানাত ছিল মধ্যকালীন ভারতের প্রথম স্থায়ী ইসলামি শাসনব্যবস্থা। 1206 খ্রিস্টাব্দে কুতুবুদ্দিন আইবেক-এর হাত ধরে এই সুলতানাতের সূচনা হয় এবং এটি 1526 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। এটি পাঁচটি রাজবংশ দ্বারা শাসিত হয়েছিল:
গোলাম বংশ (মামলুক)
খিলজি বংশ
তুঘলক বংশ
সৈয়দ বংশ
লোদি বংশ
প্রতিষ্ঠার মূল কারণসমূহ
১. মুহাম্মদ ঘুরির বিজয় (1192 খ্রিস্টাব্দ)
তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ (1192)-এ পৃথ্বীরাজ চৌহানকে পরাজিত করে উত্তর ভারতের পথ উন্মুক্ত করেন।
ঘুরির সেনাপতি কুতুবুদ্দিন আইবেক ভারতের শাসনভার পান।
২. কুতুবুদ্দিন আইবেকের ভূমিকা
1206 খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ ঘুরির মৃত্যুর পর আইবেক স্বাধীনভাবে দিল্লিতে সুলতানাত প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রথম স্বাধীন মুসলিম শাসক হিসাবে recognition পান।
৩. রাজনৈতিক অস্থিরতা
উত্তর ভারতে ছোট ছোট হিন্দু রাজ্যগুলির মধ্যে ঐক্যের অভাব।
মুসলিম শাসকদের সুসংগঠিত সেনাবাহিনী ও যুদ্ধকৌশল।
গোলাম বংশ (মামলুক) (1206-1290 খ্রিস্টাব্দ)
গুরুত্বপূর্ণ সুলতানগণ
সুলতান | কার্যক্রম | স্থাপত্য |
---|---|---|
কুতুবুদ্দিন আইবেক | লাহোর ও দিল্লিকে রাজধানী করা | কুতুব মিনার শুরু |
ইলতুতমিশ | প্রকৃত সুলতানাতের প্রতিষ্ঠাতা | দিল্লিকে রাজধানী, টাকশাল |
রাজিয়া সুলতানা | প্রথম ও একমাত্র মহিলা সুলতান | — |
প্রশাসনিক বৈশিষ্ট্য
ইকতা ব্যবস্থা: জমি বরাদ্দের মাধ্যমে সামরিক বাহিনী গঠন।
চালুক্য ও গজনভি মডেল: কেন্দ্রীয় প্রশাসন গঠন।
খিলজি বংশ (1290-1320 খ্রিস্টাব্দ)
গুরুত্বপূর্ণ সুলতান
আলাউদ্দিন খিলজি:
মঙ্গোল আক্রমণ প্রতিহত করেন।
বাজার নিয়ন্ত্রণ ও দাম নির্ধারণ ব্যবস্থা চালু করেন।
দাক্ষিণাত্য অভিযান শুরু করেন।
সামরিক সংস্কার
স্থায়ী সেনাবাহিনী গঠন।
হস্তি বাহিনী শক্তিশালীকরণ।
তুঘলক বংশ (1320-1414 খ্রিস্টাব্দ)
মুহাম্মদ বিন তুঘলকের সংস্কার
রাজধানী স্থানান্তর: দিল্লি থেকে দৌলতাবাদ (ব্যর্থ)।
টোকেন কারেন্সি: তামার মুদ্রা চালু (ব্যর্থ)।
ফিরোজ শাহ তুঘলক
কৃষি উন্নয়ন: নহর ও খাল নির্মাণ।
দাস প্রথা পুনরুজ্জীবিত করেন।
সৈয়দ ও লোদি বংশ (1414-1526 খ্রিস্টাব্দ)
দুর্বল শাসন: আঞ্চলিক শক্তির উত্থান (জৌনপুর, বাংলা)।
ইব্রাহিম লোদি: পানিপথের প্রথম যুদ্ধে (1526) বাবরের কাছে পরাজিত → মুঘল সাম্রাজ্যের সূচনা।
দিল্লি সুলতানাতের প্রভাব
ধর্ম ও সংস্কৃতি
সুফিবাদ-এর প্রসার (নিজামুদ্দিন আউলিয়া)।
ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্য: কুতুব মিনার, আলাই দরওয়াজা।
অর্থনীতি
কৃষি উন্নয়ন: নতুন ফসল (গম, তুলা)।
বাণিজ্য: আরব ও মধ্য এশিয়ার সাথে সম্পর্ক।
দ্রুত সংশোধনী
✔ প্রতিষ্ঠাতা: কুতুবুদ্দিন আইবেক (1206)।
✔ মামলুক-খিলজি-তুঘলক-সৈয়দ-লোদি—পাঁচটি রাজবংশ।
✔ আলাউদ্দিন খিলজি: বাজার নিয়ন্ত্রণ, মঙ্গোল প্রতিরোধ।
✔ ইব্রাহিম লোদি: পানিপথের যুদ্ধে পরাজয় (1526)।