মাধ্যমিক দশম শ্রেণীর বাংলা প্রশ্নপত্র ২০২০ ( with Answer)

 মাধ্যমিক দশম শ্রেণীর বাংলা প্রশ্নপত্র ২০২০

সময় : ৩ ঘণ্টা ১৫ মিনিট
নম্বর : ৯০ নম্বর


১. সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করাে: (১৭x১=১৭)

১.১ পুলিশ সেজে হরিদা দাঁড়িয়েছিলেন-
(ক) জগদীশবাবুর বাড়ি
(খ) চকের বাসস্ট্যান্ডে
(গ) দয়ালবাবুর লিচুবাগানে
(ঘ) চায়ের দোকানে

উত্তর: (গ) দয়ালবাবুর লিচুবাগানে

১.২ নদেরচাঁদের বয়স–
(ক) পঁচিশ বছর
(খ) ত্রিশ বছর
(গ) পঁয়ত্রিশ বছর
(ঘ) চল্লিশ বছর

উত্তর: (খ) ত্রিশ বছর

১.৩ ছোটোমাসি তপনের থেকে কত বছরের বড়ো-
(ক) বছর পাঁচেকের
(খ) বছর আষ্টেকের
(গ) বছর দশেকের
(ঘ) বছর বারাের

উত্তর: (খ) বছর আষ্টেকের

১.৪ ‘অভিষেক’ শীর্ষক কাব্যাংশটি ‘মেঘনাদবধকাব্য’ -এর কোন্ সর্গ থেকে নেওয়া হয়েছে?
(ক) প্রথম সর্গ
(খ) তৃতীয় সর্গ
(গ) নবম সর্গ
(ঘ) পঞ্চম সর্গ

উত্তর: (ক) প্রথম সর্গ

১.৫ “তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।” কারা স্বপ্ন দেখতে পারল না?
(ক) সেই মেয়েটি
(খ) গির্জার নান
(গ) কবিতার কথক
(ঘ) শান্ত হলুদ দেবতারা

উত্তর: (ঘ) শান্ত হলুদ দেবতারা

১.৬ “গান বাঁধবে সহস্র উপায়ে- কে গান বাঁধবে?
(ক) চিল
(খ) কোকিল
(গ) শকুন
(ঘ) ময়ূর

উত্তর: (খ) কোকিল

১.৭ পালকের কলমের ইংরেজি নাম হ’ল-
(ক) স্টাইলাস
(খ) ফাউন্টেন পেন
(গ) কুইল
(ঘ) রিজার্ভার পেন

উত্তর: (গ) কুইল

১.৮ কানে কলম খুঁজে দুনিয়া খোজেন–
(ক) প্রাবন্ধিক
(খ) দার্শনিক
(গ) গল্পকার
(ঘ) নাট্যকার

উত্তর: (খ) দার্শনিক

১.৯ “হিমালয় যেন পৃথিবীর মানদণ্ড” – উক্তিটি
(ক) রবীন্দ্রনাথের
(খ) বকিমচন্দ্রের
(গ) কালিদাসের
(ঘ) বিদ্যাসাগরের

উত্তর: (গ) কালিদাসের

১.১০ অনুসর্গের দৃষ্টান্ত কোনটি?
(ক) জন্য
(খ) খানা
(গ) টি
(ঘ) গাছা

উত্তর: (ক) জন্য

১.১১ দ্বন্দ্ব সমাসে অর্থ প্রাধান্য থাকে-
(ক) পূর্ব পদের
(খ) উভয় পদের
(গ) পর পদের
(ঘ) অন্য পদের

উত্তর: (খ) উভয় পদের

১.১২ ‘ইসাবের মেজাজ চড়ে গেল’ – নিম্নরেখ পদটি কোন কারকের উদাহরণ?
(ক) কর্ম কারক
(খ) করণ কারক
(গ) কর্তৃ কারক
(ঘ) অপাদান কারক

উত্তর: (ক) কর্ম কারক

১.১৩ ‘ফেলাইলা কনক-বলয় দূরে’- নিম্নরেখ পদটি যে সমাসের উদাহরণ তা হল
(ক) তৎপুরুষ
(খ) অব্যয়ীভাব
(গ) বহুব্রীহি
(ঘ) মধ্যপদলোপী কর্মধারয়

উত্তর: (ঘ) মধ্যপদলোপী কর্মধারয়

১.১৪ ‘বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে ত্যাগ করবেন না’- এটি কী ধরনের বাক্য?
(ক) অনুজ্ঞাসূচক বাক্য
(খ) নির্দেশক বাক্য
(গ) বিস্ময়সূচক বাক্য
(ঘ) প্রশ্নবোধক বাক্য

উত্তর: (ক) অনুজ্ঞাসূচক বাক্য

১.১৫ ‘আমি মহারাজ নই, আমি এই সৃষ্টির মধ্যে এককণা ধূলি’ -এটি কোন্ শ্রেণির বাক্য?
(ক) সরল বাক্য
(খ) যৌগিক বাক্য
(গ) জটিল বাক্য
(ঘ) মিশ্র বাক্য

উত্তর: (খ) যৌগিক বাক্য

১.১৬ ‘জগদীশবাবু সিড়ি ধরে নেমে যান’- বাক্যটির ভাববাচ্যের রূপ হ’ল-
(ক) জগদীশবাবুর সিঁড়ি ধরে নামা হয়
(খ) জগদীশবাবুর দ্বারা সিঁড়ি ধরে নামা হয়
(গ) জগদীশবাবু সিড়ি ধরে নামেন
(ঘ) জগদীশবাবু সিঁড়ি ধরে নেমে আসেন

উত্তর: (ক) জগদীশবাবুর সিঁড়ি ধরে নামা হয়

১.১৭ ‘নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে’- এটি কোন বাচ্যের উদাহরণ
(ক) কর্মবাচ্য
(খ) ভাববাচ্য
(গ) কর্তৃবাচ্য
(ঘ) কর্মকর্তৃবাচ্য

উত্তর: (গ) কর্তৃবাচ্য


২. কমবেশি ২০টি শব্দে প্রশ্নগুলির উত্তর দাও: (১ x ১৯ = ১৯)

২.১ যে-কোনাে ৪টি প্রশ্নের উত্তর দাও। (১ X ৪= ৪)

২.১.১ ‘বড়াে ভয় করিতে লাগিল নদেরচাঁদের”- নদেরচাঁদের কেন ভয় করতে লাগল?
উত্তর: ক্ষোভে রোষে উন্মত্ত জলরাশির দিকে দৃষ্টিপাত করে তার ভয় করতে লাগল।

২.১.২ “অমৃত ফতোয়া জারি করে দিল,”- অমৃত কী ‘ফতোয়া’ জারি করেছিল?
উত্তর: ঠিক ইসাবের মতো জামাটি না পেলে ও ইস্কুলে যাবে না, এই ফতোয়া জারি করেছিল অমৃত।

২.১.৩ “বুড়ােমানুষের কথাটা শুনো”- বুড়ােমানুষের কোন কথা শুনতে বলা হয়েছে?
উত্তর: বুড়োমানুষ অর্থাৎ নিমাইবাবু যে কথাটি গিরিশ মহাপাত্রকে শুনতে বলেছিলেন তা হল- “আর (গাঁজা) খেও না।”

২.১.৪ “আপনি কি ভগবানের চেয়েও বড়াে?”- বক্তা একথা কাকে বলেছিলেন?
উত্তর: বক্তা অর্থাৎ বিরাগী জগদীশবাবুকে একথা বলেছিলেন।

২.১.৫ “আজ যেন তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন।”- বক্তার কোন্ দিনটি সবচেয়ে দুঃখের?
উত্তর: যেদিন বক্তা অর্থাৎ তপন নিজের লেখা গল্পটি মুদ্রিত আকারে হাতে পেয়েছিল।


২.২ যে-কোনাে চারটি প্রশ্নের উত্তর দাও: (৪×১=৪)

২.২.১ “এল ওরা লােহার হাতকড়ি নিয়ে”- ওরা কারা?
উত্তর: ওরা বলতে ঔপনিবেশিক শক্তিকে বোঝানো হয়েছে।

২.২.২ “হায়, বিধি বাম মম প্রতি।” বক্তার এমন মন্তব্যের কারণ কী?
উত্তর: দেবতাদের অনুগ্রহে রাম-লক্ষণ মরেও বেঁচে উঠেছিল। এইজন্য রাক্ষসরাজ রাবণ এরকম মন্তব্য করেছেন।

২.২.৩ “তােমায় নিয়ে বেড়াবে গান”- গান কোথায় বেড়াবে?
উত্তর: নদীতে, দেশ-গায়ে বেড়াবে গান।

২.২.৪ “ধ্বংস দেখে ভয় কেন তাের?”- কবি এ প্রশ্ন কাদের উদ্দেশ্যে করেছেন?
উত্তর: কবি সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে এই প্রশ্ন করেছেন।

২.২.৫ ‘সিন্ধুতীরে রহিছে মাঞ্জস।” – “মাঞ্জস’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘মাঞ্জস’ শব্দের অর্থ ভেলা।


২.৩ যে-কোনাে তিনটি প্রশ্নের উত্তর দাও: (৩x১=৩)

২.৩.১ “তাই নিয়ে আমাদের প্রথম লেখালেখি।”- কী নিয়ে লেখকদের ‘প্রথম লেখালেখি’?
উত্তর: বাঁশের কলম, মাটির দোয়াত, ঘরে তৈরি কালি এবং লেখার জন্য কলাপাতা- এই নিয়ে লেখকদের প্রথম লেখালেখি।

২.৩.২ “লাঠি তােমার দিন ফুরাইয়াছে।” কথাটি কে বলেছিলেন?
উত্তর: কথাটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা।

২.৩.৩ “এতে রচনা উৎকট হয়।” রচনা ‘উৎকট’ হয় কীসে?
উত্তর: লেখক যদি ইংরেজিতে তার বক্তব্য ভাবেন এবং সেটিকে যথাযথ বাংলা অনুবাদ করে প্রকাশ করতে চান, তখন রচনা উৎকট হয়।

২.৩.৪ প্রয়ােজনমতাে বাংলা শব্দ পাওয়া না গেলে কী করা উচিত বলে লেখক মনে করেছেন?
উত্তর: প্রয়ােজনমতাে বাংলা শব্দ পাওয়া না গেলে ইংরেজি শব্দই বাংলা বানানে লেখা উচিত বলে লেখক মনে করেছেন।


২.৪ যে-কোনাে আটটি প্রশ্নের উত্তর দাওঃ (৮x১=৮)

২.৪.১ তির্যক বিভক্তি কাকে বলে?
উত্তর: যেসব বিভক্তি একাধিক কারকে প্রযুক্ত হয় তাদেরকে তির্যক বিভক্তি বলে।

২.৪.২ সম্বন্ধপদ কারক নয় কেন?
উত্তর: বাক্যের অন্তর্গত যে নামপদের ক্রিয়াপদের সঙ্গে সরাসরি কোনো সম্পর্ক থাকে না, বরং অন্য কোনো নামপদের সঙ্গে সম্বন্ধ থাকে তাকে সম্বন্ধ পদ বলে।

২.৪.৩ অব্যয়ীভাব সমাসের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর: উপকূল= কূলের সমীপে (অব্যয়ীভাব সমাস)

২.৪.৪ নিরপেক্ষ কর্তার উদাহরণ দাও।
উত্তর: শ্রেয়া গান গাইলে অঙ্কিতা আবৃত্তি করবে- এই বাক্যে শ্রেয়া হল নিরপেক্ষ কর্তা।

২.৪.৫ নিম্নরেখ শব্দটির কারক ও বিভক্তি নির্ণয় করাে:- “পৃথিবী হয়তাে বেঁচে আছে।”
উত্তর: পৃথিবী- কর্তৃকারক, শূন্য বিভক্তি।

২.৪.৬ উদ্দেশ্য ও বিধেয় অংশ চিহ্নিত করাে- “ওরা ভয়ে কাঠ হয়ে গেল।”
উত্তর: উদ্দেশ্য- ‘ওরা’, বিধেয়- ‘ভয়ে কাঠ হয়ে গেল’।

২.৪.৭ সূর্য পশ্চিমদিকে উদিত হয়- বাক্যনির্মাণের কোন্ শর্ত এখানে লঙ্ঘন করা হয়েছে?
উত্তর: এখানে বাক্যনির্মাণের যে শর্তটি লঙ্ঘন করা হয়েছে তা হল- যোগ্যতা।

২.৪.৮ ‘বহুরূপী’- শব্দটির ব্যাসবাক্যসহ সমাসের নাম করাে।
উত্তর: বহুরূপী= বহু রূপ আছে যার (বহুব্রীহি সমাস)।

২.৪.৯ ‘কলম তাদের কাছে আজ অস্পৃশ্য।’ – জটিল বাক্যে পরিবর্তন করাে।
উত্তর: তাদের কাছে আজ যা অস্পৃশ্য তা হল কলম। (জটিল বাক্য)

২.৪.১০ ‘নদীর ধারে তার জন্ম হইয়াছে’- কর্তৃবাচ্যে পরিণত করাে।
উত্তর: তিনি নদীর ধারে জন্মাইয়াছেন। (কর্তৃবাচ্য)

৩. প্রসঙ্গ নির্দেশসহ কম-বেশি ৬০ টি শব্দে উত্তর দাও: (৩+৩= ৬)

৩.১ যে-কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:

৩.১.১ “ছেলেদুটোর সবই একরকম, তফাত শুধু এই যে”- ছেলেদুটি কে কে? তাদের মধ্যে তফাত কোথায়? (১+২)
ছেলেদুটি হলো নদেরচাঁদ এবং ছোটো মাসির ছেলে। তফাত হলো, নদেরচাঁদ বেশি ভয় পায় এবং ছোটো মাসির ছেলে সাহসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

৩.১.২ “সে ভয়ানক দুর্লভ জিনিস।”- কোন জিনিসের কথা বলা হয়েছে? তা দুর্লভ কেন? (১+২)
পুলিশের পোশাক। তা দুর্লভ কারণ, সাধারণ মানুষের কাছে এমন পোশাক পাওয়া কঠিন।

৩.২ যে-কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও: (১x৩=৩)

৩.২.১ “এসাে যুগান্তের কবি,”– ‘যুগান্তের কবি’কে কেন আহ্বান করা হয়েছে?
‘যুগান্তের কবি’কে আহ্বান করা হয়েছে কারণ, সমাজের পরিবর্তন ও নবজাগরণের জন্য নতুন যুগের কবির প্রয়োজন। কবি সমাজের উন্নতির জন্য নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রেরণা দেবে।

৩.২.২ “সে জানত না আমি আর কখনাে ফিরে আসব না।”- ‘সে’ কে? ‘আমি আর কখনাে ফিরে আসব না’ বলার কারণ কী? (১+২)
‘সে’ হলো নদেরচাঁদের মা। ‘আমি আর কখনাে ফিরে আসব না’ বলার কারণ হলো, নদেরচাঁদ বিদায় নিচ্ছে এমন জায়গায় যেখানে তার আর ফেরা হবে না।


৪. কম-বেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও: (৫)

৪.১ “ও আমাকে শিখিয়েছে, খাঁটি জিনিস কাকে বলে।” - কে, কাকে শিখিয়েছে? ‘খাঁটি জিনিস’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? (২+৩)
নদেরচাঁদ বলছে যে, তার বন্ধু তাকে শিখিয়েছে খাঁটি জিনিস কাকে বলে। খাঁটি জিনিস বলতে বোঝানো হয়েছে সত্যিকারের বন্ধুত্ব, সততা ও প্রকৃত মূল্যবোধ। সে শিখেছে, প্রকৃত বন্ধুত্বে কোনো ভণ্ডামি বা অসত্য থাকে না এবং জীবনে সফল হতে হলে খাঁটি মূল্যবোধের ওপর দাঁড়াতে হয়। বন্ধুর কাছ থেকে শেখা এই খাঁটি মূল্যবোধ তাকে জীবনে সঠিক পথে চলতে সাহায্য করেছে।

৪.২ “তাহার পরিচ্ছদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া মুখ ফিরাইয়া হাসি গােপন করিল”— কে হাসি গােপন করল? তার হাসি পাওয়ার কারণ কী? (১+৪)
গিরিশ মহাপাত্র হাসি গােপন করল। তার হাসি পাওয়ার কারণ হলো নিমাইবাবুর অদ্ভুত পোশাক। নিমাইবাবু পোশাক-আশাকের বিষয়ে অসাবধানী এবং অদ্ভুত পোশাক পরতেন যা অন্যদের কাছে হাসির কারণ হতো।


৫. কম-বেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও: (৫)

৫.১ “অভিষেক করিলা কুমারে।”– ‘কুমার’ কে? পাঠ্য কবিতা অবলম্বনে কুমারের চরিত্র আলোচনা করাে। (১+৪)
‘কুমার’ হলো মেঘনাদ। মেঘনাদবধ কাব্যে কুমার মেঘনাদের চরিত্র হলো সাহসী, বীর এবং তার পিতার প্রতি অনুগত। মেঘনাদ নিজেকে যোদ্ধা হিসেবে প্রমাণ করেছে এবং তার সাহস ও বীরত্ব তাকে রাবণের প্রিয় পুত্র করেছে। যুদ্ধের সময় মেঘনাদ নির্ভীকভাবে লড়াই করে এবং তার প্রতিটি কাজ তার বীরত্বের পরিচয় দেয়। কাব্যে মেঘনাদের অভিষেক তার বীরত্ব ও যোগ্যতার পরিচয় বহন করে।

৫.২ “আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি”- কবিতার বিষয়বস্তু সংক্ষেপে লেখাে। (৫)
“আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি” কবিতার বিষয়বস্তু হলো একতা ও বন্ধন। কবিতায় কবি একসাথে থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন যে, মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসা থাকতে হবে। সমাজে সবাইকে মিলেমিশে থাকতে হবে এবং কোন প্রকার বিভেদ বা বিরোধ থাকা উচিত নয়। একতা ও বন্ধনের মাধ্যমেই সমাজে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসতে পারে। কবি মানুষের মধ্যে এই বন্ধন ও ভালোবাসা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন।


৬. কম-বেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও: (৫)

৬.১ “বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চায় এখনও নানারকম বাধা আছে।”- লেখক কোন্ ধরনের বাধার কথা বলেছেন? (৫)
লেখক বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার বাধাগুলির মধ্যে প্রধানত ভাষাগত ও পরিকাঠামোগত বাধার কথা বলেছেন। প্রথমত, অনেক বৈজ্ঞানিক পরিভাষা এখনও বাংলায় অনুবাদ করা হয়নি, ফলে ছাত্রদের ইংরেজি পরিভাষা ব্যবহার করতে হয় যা তাদের জন্য কঠিন। দ্বিতীয়ত, বাংলা ভাষায় পর্যাপ্ত মানসম্পন্ন বৈজ্ঞানিক পাঠ্যপুস্তক নেই। তৃতীয়ত, শিক্ষকদের বিজ্ঞান শেখানোর জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও উপকরণ নেই। এছাড়া, প্রয়োজনীয় গবেষণাগার ও সরঞ্জামের অভাবও বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার বড় বাধা। এই বাধাগুলি দূর করতে হলে বাংলা ভাষায় বৈজ্ঞানিক পরিভাষা তৈরি, মানসম্পন্ন পাঠ্যপুস্তক রচনা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং পর্যাপ্ত গবেষণাগার ও সরঞ্জামের ব্যবস্থা করতে হবে।

৬.২ “আমার মনে পড়ে প্রথম ফাউন্টেন কেনার কথা”- বক্তার আসল নাম কী? তাঁর ফাউন্টেন কেনার ঘটনাটি সংক্ষেপে বিবৃত করাে। (১+৪)
বক্তার আসল নাম হলো অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ফাউন্টেন কেনার ঘটনা ছিলো খুবই উত্তেজনাপূর্ণ। তিনি ছোটবেলায় তার বাবার সঙ্গে শহরে গিয়েছিলেন এবং সেখানে একটি ফাউন্টেন কলম দেখতে পান। তার বাবার কাছে ফাউন্টেন কলম কেনার জন্য আবদার করেন এবং তার বাবা তার ইচ্ছা পূরণ করেন। প্রথমবার ফাউন্টেন কলম হাতে পাওয়ার আনন্দ ও উত্তেজনা অতীনের জীবনে এক বিশেষ স্মৃতি হয়ে থাকে। তিনি এই স্মৃতিকে খুবই গুরুত্ব দেন কারণ এটি তার শিক্ষাজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল।


৭. কম-বেশি ১২৫ শব্দে যে-কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও: (৪)

৭.১ “এইবার হয় তাে শেষ যুদ্ধ !”– কোন্ যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে? বক্তা এই যুদ্ধকে ‘শেষ যুদ্ধ’ বলেছেন কেন? (১+৩)
এই যুদ্ধ হলো মেঘনাদের সাথে রামের যুদ্ধ। বক্তা অর্থাৎ রাবণ এই যুদ্ধকে ‘শেষ যুদ্ধ’ বলেছেন কারণ, তিনি জানতেন যে মেঘনাদ এবং রামের মধ্যে এই যুদ্ধে পরাজয় বা বিজয় যাই হোক না কেন, এই যুদ্ধই তার জীবনের শেষ যুদ্ধ হবে। রাবণ বিশ্বাস করতেন যে, এই যুদ্ধের পর তিনি আর যুদ্ধ করতে পারবেন না এবং এটি তার জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

৭.২ “দরবার ত্যাগ করতে আমরা বাধ্য হচ্ছি জাঁহাপনা।” - বক্তা কে? তারা কেন দরবার ত্যাগ করতে চান? (১+৩)
বক্তা হলো গিরিশ মহাপাত্র। তারা দরবার ত্যাগ করতে চান কারণ, রাজা তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করেননি এবং তাদের অবমূল্যায়ন করেছেন। তাদের সম্মান ও মর্যাদার ক্ষতি হয়েছে এবং তাই তারা রাজা ও তার দরবার থেকে দূরে যেতে চান।


৮. কম-বেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনাে দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও: (৫x২=১০)

৮.১ “ফাইট কোনি, ফাইট”- সাধারণ সাঁতারু থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠতে গিয়ে কোনিকে কী ধরনের ‘ফাইট’ করতে হয়েছিল, নিজের ভাষায় লেখ।
কোনি ছিলো একজন সাধারণ সাঁতারু যার জীবন সহজ ছিল না। সে তার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যাত্রায় অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছিল। প্রথমত, তার পরিবারে আর্থিক সংকট ছিল যা তাকে সাঁতারের প্রশিক্ষণ নিতে বাধা দেয়। দ্বিতীয়ত, সমাজের বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য ও প্রাচীন ধ্যানধারণার সাথে তাকে লড়াই করতে হয়েছিল। তৃতীয়ত, তার সাঁতারের প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব ছিল। চতুর্থত, তার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির জন্য তাকে নিজেকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করতে হয়েছিল। এইসব বাধা পেরিয়ে কোনি তার কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।

৮.২ “খিদ্দা, এবার আমরা কী খাব?”- বক্তা কে? উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কীভাবে তাদের সাহায্য করেছেন? (১+৪)
বক্তা হলো একদল গরীব শিশু। উদ্দিষ্ট ব্যক্তি হলো মেজদা। মেজদা তাদেরকে সাহায্য করেছেন খাবার এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে। তিনি তার সামর্থ্য অনুযায়ী শিশুদের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং তাদের খাওয়ার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। মেজদা শিশুদের আশ্রয় এবং নিরাপত্তা দিয়েছেন, যাতে তারা ভালোভাবে বাঁচতে পারে।

৮.৩ “খাওয়ায় আমার লােভ নেই। ডায়েটিং করি।” - বক্তা কে? তার ডায়েটিং-এর পরিচয় দাও। (১+৪)
বক্তা হলো বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তার ডায়েটিং হলো তার স্বাস্থ্য সচেতনতা ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণ। তিনি খাওয়াতে লোভ না করে নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণে খাবার গ্রহণ করেন। তিনি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখেন এবং অপ্রয়োজনীয় খাবার এড়িয়ে চলেন। তার ডায়েটিং মানে হলো স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা।


৯. চলিত গদ্যে বঙ্গানুবাদ করাে: (৪)

Home is the first school where the child learns his first lesson. He sees, hears and begins to learn at home. In a good home honest and healthy men are made. Bad influence at home spoils a child.

উত্তর:
গৃহই হল প্রথম বিদ্যালয় যেখানে শিশু তার প্রথম পাঠ গ্রহণ করে। সে দেখে, শুনে এবং গৃহেই শিখতে শুরু করে। উত্তম গৃহে সৎ এবং স্বাস্থ্যবান মানুষ তৈরি হয়। গৃহের কুপ্রভাব একটি শিশুকে নষ্ট করে দেয়।


১০. কম-বেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও : (৫x১=৫)

১০.১ মাধ্যমিকের পর কী বিষয় নিয়ে পড়বে, এ বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে একটি কাল্পনিক সংলাপ রচনা করাে।
রাকেশ: হাই, রাজু! মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল বের হয়েছে। এবার কোন বিষয় নিয়ে পড়বে ভেবেছো?

রাজু: হাই, রাকেশ! হ্যাঁ, আমি বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার কথা ভাবছি। তুমি?

রাকেশ: আমি বাণিজ্য নিয়ে পড়তে চাই। বিজ্ঞান কেন ভাবছো?

রাজু: আমি ডাক্তার হতে চাই। তাই বিজ্ঞান নিয়ে পড়া আমার জন্য উপযুক্ত হবে। বায়োলজি এবং কেমিস্ট্রি আমার প্রিয় বিষয়।

রাকেশ: তা খুব ভালো। আমি ব্যবসা নিয়ে পড়তে চাই। ভবিষ্যতে একটি বড় ব্যবসা শুরু করতে চাই।

রাজু: দারুণ পরিকল্পনা! তোমার ব্যবসায়িক জ্ঞান ভালো। আমি নিশ্চিত তুমি সফল হবে।

রাকেশ: ধন্যবাদ, রাজু। তুমি একজন ভালো ডাক্তার হবে, আমি জানি। আমাদের উভয়ের জন্যই শুভকামনা!

রাজু: ধন্যবাদ, রাকেশ! আমাদের স্বপ্ন পূরণ হোক।

১০.২ তোমার এলাকায় অরণ্য সপ্তাহ পালিত হল- এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা করো।

আমাদের এলাকায় এই বছর অরণ্য সপ্তাহ পালিত হলো। স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এই আয়োজন করেছিল। সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে এলাকার মানুষকে বৃক্ষরোপণ ও পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করা হয়। প্রথম দিনেই একটি শোভাযাত্রা আয়োজন করা হয়, যেখানে শিশু, যুবক ও বৃদ্ধ সকলেই অংশগ্রহণ করেন। শোভাযাত্রায় পরিবেশবান্ধব প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে অংশগ্রহণকারীরা এলাকার বিভিন্ন স্থানে বৃক্ষরোপণ করেন।

প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় বিভিন্ন সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও সমাজকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন এবং তারা বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, এবং পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনা করেন। সপ্তাহব্যাপী আয়োজনে এলাকার স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরাও অংশগ্রহণ করে। তারা রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশ নেয়।

অরণ্য সপ্তাহের শেষ দিন এলাকায় একটি বড় মেলা আয়োজন করা হয়। মেলায় পরিবেশবান্ধব পণ্যের স্টল এবং সচেতনতামূলক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

অরণ্য সপ্তাহ পালনের মাধ্যমে এলাকাবাসী পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে আরও সচেতন হয়েছে এবং তারা অঙ্গীকার করেছেন যে, তারা পরিবেশ সংরক্ষণে সবসময় সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন।


১১. কম-বেশি ৪০০ শব্দে যে-কোনাে একটি বিষয়ে প্রবন্ধ রচনা করাে: (১০)

১১.১ বিজ্ঞানের ভালাে মন্দ

বিজ্ঞান আমাদের জীবনে একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞান আমাদের জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে এবং আমাদের জীবনকে সহজ ও সুবিধাজনক করে তুলেছে। তবে, বিজ্ঞানের যেমন অনেক ভালো দিক রয়েছে, তেমনই কিছু মন্দ দিকও রয়েছে।

বিজ্ঞানের ভালো দিকগুলো উল্লেখ করতে গেলে প্রথমেই আসে চিকিৎসাবিজ্ঞান। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে আজ আমরা অনেক কঠিন রোগের চিকিৎসা করতে সক্ষম হয়েছি। মানুষ এখন আর সহজে মারা যায় না এবং জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে। এছাড়া, যোগাযোগ ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের উন্নতি আমাদের জীবনকে সহজ করে তুলেছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা এখন যেকোনো তথ্য পেতে পারি এবং যেকোনো ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করতে পারি।

বিজ্ঞান কৃষিক্ষেত্রেও বিপ্লব এনেছে। উন্নত প্রযুক্তি ও গবেষণার মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং খাদ্য সংকট কমেছে। পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতির ফলে আমরা এখন দ্রুত যেকোনো স্থানে যেতে পারি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবহারে বিজ্ঞানের অগ্রগতি আমাদের জীবনযাত্রাকে আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় করেছে।

তবে, বিজ্ঞানের কিছু মন্দ দিকও রয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে পরিবেশ দূষণ বেড়েছে। কারখানার বর্জ্য, যানবাহনের ধোঁয়া এবং প্লাস্টিক দূষণ আমাদের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া, প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানুষ এখন কম শারীরিক পরিশ্রম করে এবং স্বাস্থ্য সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেই মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যা মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

বিজ্ঞানের আরও একটি মন্দ দিক হলো অস্ত্র প্রযুক্তির উন্নতি। আধুনিক অস্ত্র ও পরমাণু বোমার ব্যবহার যুদ্ধ ও সংঘর্ষের সময় বিপুল ক্ষতি করতে পারে। মানুষের জীবনের সুরক্ষা হুমকির মুখে পড়েছে এবং পৃথিবীতে শান্তি বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

বিজ্ঞান আমাদের জীবনে যেমন অনেক ভালো দিক এনেছে, তেমনই কিছু মন্দ দিকও রয়েছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতি আমাদের জীবনে বিপুল সুবিধা এনে দিয়েছে, তবে এই সুবিধাগুলি সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে তা আমাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই, আমাদের উচিত বিজ্ঞানের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং এর মন্দ দিকগুলি থেকে সাবধান থাকা। বিজ্ঞানের সঠিক ব্যবহারেই আমরা একটি উন্নত, সুন্দর ও শান্তিময় পৃথিবী গড়তে পারব।

১১.২ একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

ভ্রমণ আমাদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতা। বিভিন্ন স্থান ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার সুযোগ দেয়। গত বছর আমি আমার পরিবারসহ দার্জিলিং ভ্রমণে গিয়েছিলাম। এই ভ্রমণটি আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় ও আনন্দময় অভিজ্ঞতা ছিল।

আমরা দার্জিলিং পৌঁছানোর পর প্রথমেই হিমালয়ের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে যাই। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে তুষারাবৃত কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারণ। পরের দিন আমরা টাইগার হিলে সূর্যোদয় দেখতে যাই। সূর্যোদয়ের সময় পাহাড়ের গায়ে সূর্যের রশ্মি পড়ে যে দৃশ্যের সৃষ্টি হয় তা সত্যিই মন্ত্রমুগ্ধকর। সূর্যের আলোতে কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ আরো সুন্দর হয়ে ওঠে।

আমরা দার্জিলিং ম্যালেও ঘুরতে যাই। ম্যালের কোলাহলমুক্ত পরিবেশে হাঁটা ও স্থানীয় দোকানগুলোতে কেনাকাটা করার অভিজ্ঞতা ছিল আনন্দময়। দার্জিলিং চা বাগানও আমাদের ভ্রমণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল। চা বাগানের সবুজে মোড়ানো দৃশ্য ও তাজা চায়ের সুবাস আমাদের মনকে শীতল ও প্রফুল্ল করে তোলে।

দার্জিলিং রোপওয়েতে চড়ে আমরা পাহাড়ের উপর থেকে চারপাশের দৃশ্য উপভোগ করি। রোপওয়ে থেকে নিচে তাকালে মনে হয় যেন আমরা মেঘের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া, দার্জিলিং জু থেকে আমরা বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও পাখি দেখতে পাই। বিশেষ করে, তুষার চিতাবাঘ ও লাল পান্ডা আমাদের বেশ আকর্ষণ করেছিল।

ভ্রমণের শেষ দিনে আমরা ঘুম মনাস্ট্রি পরিদর্শন করি। মনাস্ট্রির শান্ত ও পবিত্র পরিবেশে সময় কাটানো ছিল সত্যিই এক অনন্য অভিজ্ঞতা। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের প্রার্থনা ও ধ্যান আমাদের মনকে প্রশান্তি দেয়।

দার্জিলিং ভ্রমণ আমাদের জন্য শুধু আনন্দদায়ক ছিল না, বরং শিক্ষামূলকও ছিল। আমরা বিভিন্ন সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি।

এই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার জীবনে এক চিরস্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে। প্রকৃতির সান্নিধ্য, পাহাড়ের সৌন্দর্য এবং নতুন নতুন জায়গা দেখার আনন্দ আমার মনে চিরকাল জাগরুক থাকবে। ভবিষ্যতে আবার এমন সুন্দর ভ্রমণের সুযোগ পেলে আমি তা লুফে নেব।

১১.৩ আমাদের পরিবেশঃ সমস্যা ও প্রতিকার

আমাদের পরিবেশ আজ নানা সমস্যার সম্মুখীন। দূষণ, বন উজাড়, বন্যপ্রাণীর বিলুপ্তি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আমাদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এই সমস্যাগুলি আমাদের স্বাস্থ্যের উপর, জীববৈচিত্র্যের উপর এবং পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

দূষণ হলো আমাদের পরিবেশের প্রধান সমস্যা। বায়ু দূষণ, জল দূষণ এবং মাটির দূষণ আমাদের পরিবেশকে বিপন্ন করছে। শিল্প কারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস, যানবাহনের ধোঁয়া এবং বর্জ্য পদার্থ বায়ু দূষণের কারণ। প্লাস্টিক বর্জ্য, রাসায়নিক পদার্থ এবং অপরিশোধিত নর্দমার জল জল দূষণ সৃষ্টি করছে। কৃষি ও শিল্পের রাসায়নিক ব্যবহার মাটির উর্বরতা নষ্ট করছে।

বন উজাড় আরেকটি বড় সমস্যা। বনভূমি ধ্বংসের ফলে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে এবং পরিবেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বনভূমি ধ্বংসের ফলে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে এবং অনেক প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও আমাদের পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং আবহাওয়ার চরম পরিবর্তন ঘটছে।

এই সমস্যাগুলির প্রতিকার করা জরুরি। পরিবেশ দূষণ কমানোর জন্য আমাদের শিল্প কারখানা ও যানবাহনে দূষণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে হবে। প্লাস্টিক ব্যবহার কমাতে হবে এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে হবে। মাটির উর্বরতা বজায় রাখতে জৈব সার ও প্রাকৃতিক কীটনাশকের ব্যবহার বাড়াতে হবে।

বন সংরক্ষণে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে এবং বনভূমি ধ্বংস রোধ করতে হবে। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি চালাতে হবে এবং বনভূমির সংরক্ষণ ও পুনর্বাসন করতে হবে। বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণে সুরক্ষিত অভয়ারণ্য ও জাতীয় উদ্যান প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং অবৈধ শিকার বন্ধ করতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে আমাদের কার্বন নির্গমন কমাতে হবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসের ব্যবহার বাড়াতে হবে। সৌর, বায়ু ও জলবিদ্যুৎ ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎপাদন করতে হবে।

পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করতে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর পৃথিবী গড়তে আমাদের সকলেরই ভূমিকা পালন করতে হবে।

১১.৪ খেলাধুলা ও ছাত্রসমাজ

খেলাধুলা ছাত্রসমাজের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা অপরিহার্য। খেলাধুলা ছাত্রদের শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখে, মনোবল বৃদ্ধি করে এবং সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে তোলে।

প্রথমত, খেলাধুলা ছাত্রদের শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত খেলার মাধ্যমে শরীরের পেশি ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সুগঠিত হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শরীর সুস্থ থাকে। শারীরিক সুস্থতা ছাত্রদের পড়াশোনায় মনোযোগ বৃদ্ধি করে এবং মস্তিষ্ককে সতেজ রাখে।

দ্বিতীয়ত, খেলাধুলা ছাত্রদের মানসিক বিকাশে সহায়তা করে। খেলার মাধ্যমে ছাত্ররা মনোবল, ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে। প্রতিযোগিতামূলক খেলা ছাত্রদের মধ্যে জয়পরাজয়কে মেনে নেওয়ার মানসিকতা গড়ে তোলে এবং তাদের আত্মনির্ভরশীল করে তোলে।

তৃতীয়ত, খেলাধুলা ছাত্রদের মধ্যে সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে তোলে। দলগত খেলায় ছাত্ররা সহযোগিতা, নেতৃত্ব, সম্মান, শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা শেখে। দলগত খেলায় একজন নেতা হিসেবে অন্যদের প্রেরণা দেওয়ার গুণাবলি গড়ে ওঠে। এছাড়া, খেলাধুলা ছাত্রদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ন্যায় ও সৎ মনোভাব তৈরি করে।

চতুর্থত, খেলাধুলা ছাত্রদের মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে সহায়তা করে। পড়াশোনার চাপ থেকে মুক্তি পেতে খেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। খেলার সময় ছাত্ররা মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পায় এবং তাদের মনোবল পুনরুদ্ধার করে।

তবে, খেলাধুলায় নিয়মিত অংশগ্রহণের জন্য ছাত্রদের সময় ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ। পড়াশোনা ও খেলার মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। অভিভাবক ও শিক্ষকদের উচিত ছাত্রদের খেলা ও পড়াশোনার মধ্যে সমন্বয় বজায় রাখতে উৎসাহিত করা।

খেলাধুলা ছাত্রসমাজের জীবনে একটি অপরিহার্য অংশ। এটি ছাত্রদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা ও অভিভাবক ও শিক্ষকদের উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে ছাত্ররা খেলাধুলায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করতে পারে এবং তাদের জীবনে সাফল্য অর্জন করতে পারে।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post