ক) পরিবেশ বিজ্ঞানের মৌলিক ধারণা (Basics of Environmental Science)
সংজ্ঞা:
পরিবেশবিজ্ঞান এমন একটি আন্তঃবিষয়ক শাস্ত্র যা মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সম্পর্ক, মিথস্ক্রিয়া এবং পরিবেশগত সমস্যার কারণ ও সমাধান নিয়ে আলোচনা করে।
প্রধান শাখাসমূহ:
পরিবেশবিদ্যা (Ecology): জীব ও তাদের পরিবেশের মিথস্ক্রিয়া।
জলবায়ু বিজ্ঞান: গ্রিনহাউস প্রভাব, গ্লোবাল ওয়ার্মিং।
প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা: বন, জল, খনিজ সম্পদ।
গুরুত্বপূর্ণ ধারণা:
জৈব-বৈচিত্র্য (Biodiversity): প্রজাতির বৈচিত্র্য (অ্যামাজন রেইনফরেস্ট)।
স্থিতিশীলতা (Sustainability): ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সম্পদ সংরক্ষণ।
উদাহরণ:
গ্রিনহাউস গ্যাস (CO₂, CH₄): জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ।
ওজোন স্তর ক্ষয়: CFC গ্যাসের প্রভাব।
১. পরিবেশের উপাদানসমূহ
জৈবিক উপাদান: মানুষ, প্রাণী, উদ্ভিদ, অণুজীব
অজৈবিক উপাদান: মাটি, জল, বায়ু, খনিজ
বিষয়ের শাখা:
-
জীববিজ্ঞান, ভূগোল, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদির সংমিশ্রণ
২. বাস্তুতন্ত্রের প্রকারভেদ
বাস্তুতন্ত্র | বৈশিষ্ট্য | উদাহরণ |
---|---|---|
স্থলজ | মাটি ভিত্তিক | বন, তৃণভূমি |
জলজ | জল ভিত্তিক | নদী, সমুদ্র, হ্রদ |
কৃত্রিম | মানবসৃষ্ট | কৃষিক্ষেত্র, শহর |
৩. গুরুত্বপূর্ণ ধারণা
খাদ্য শৃঙ্খল: উৎপাদক → প্রাথমিক ভোক্তা → মাধ্যমিক ভোক্তা
উদাহরণ: ঘাস → হরিণ → বাঘ
জৈব-ভৌগোলিক চক্র: কার্বন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস চক্র
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
কার্বন চক্রে গাছ CO₂ শোষণ করে এবং O₂ নির্গত করে
নাইট্রোজেন চক্রে ব্যাকটেরিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
খ) পরিবেশ শিক্ষা ও সচেতনতা
সংজ্ঞা:
পরিবেশ শিক্ষা হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা মানুষের মধ্যে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা, জ্ঞান ও দায়িত্বশীল আচরণ গড়ে তোলে।
উদ্দেশ্য:
-
পরিবেশ সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ
-
সমস্যার সমাধানমূলক চিন্তা গঠনে সহায়তা
-
টেকসই উন্নয়নের ধারণা ছড়িয়ে দেওয়া
উপায়:
-
বিদ্যালয়ে পরিবেশ শিক্ষা অন্তর্ভুক্তি
-
প্রচারপত্র, মিডিয়া, এনভায়রনমেন্ট ক্লাব
-
জনসচেতনতা অভিযানে অংশগ্রহণ
১. পরিবেশ শিক্ষার স্তর
প্রাথমিক স্তর: প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত
উচ্চশিক্ষা স্তর: স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ
সামাজিক স্তর: স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য কর্মশালা
২. ভারতের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প
প্রকল্প | লক্ষ্য | বর্ষ |
---|---|---|
ন্যাশনাল গ্রিন কর্পস | স্কুল স্তরে পরিবেশ শিক্ষা | ২০০১ |
ইকো ক্লাব | যুবাদের সম্পৃক্ততা | ১৯৯১ |
৩. সচেতনতা বৃদ্ধির কৌশল
পাঠ্যক্রমভুক্ত করা: পরিবেশ বিজ্ঞান বাধ্যতামূলক বিষয় করা
কার্যক্রম: বৃক্ষরোপণ দিবস, জল সংরক্ষণ কর্মশালা
পরীক্ষার টিপস:
ভারতের সংবিধানের 51A(g) ধারা: পরিবেশ সংরক্ষণ নাগরিকের কর্তব্য
আরটিআই ব্যবহার করে পরিবেশ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়
গ) পরিবেশ ও সভ্যতার মিথস্ক্রিয়া
ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে:
-
প্রাচীন সভ্যতা (সিন্ধু, মিসর) নদী-নির্ভর ছিল
-
কৃষির বিকাশ পরিবেশের উপর নির্ভরশীল
-
সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশের ওপর চাপ বাড়ে
মিথস্ক্রিয়া:
-
পরিবেশ সভ্যতার গঠন নির্ধারণ করে
-
সভ্যতা পরিবেশ পরিবর্তন ঘটায় (শিল্পায়ন, নগরায়ন)
দৃষ্টান্ত:
-
বন উজাড় → বায়ু দূষণ
-
নদীর দখল → বন্যা প্রবণতা বৃদ্ধি
১. ঐতিহাসিক প্রভাব
সভ্যতা | পরিবেশগত প্রভাব | বর্তমান অবস্থা |
---|---|---|
সিন্ধু | উন্নত নিকাশি ব্যবস্থা | শুষ্ক হয়ে যাওয়া |
মায়া | কৃষির জন্য বন উজাড় | ধ্বংস |
২. আধুনিক সমস্যা
বায়ু দূষণ: দিল্লির বায়ু মান সূচক (AQI) শীতকালে 400+
জল দূষণ: গঙ্গা নদীতে প্লাস্টিক ও শিল্প বর্জ্য
সমাধান:
জৈব কৃষি: রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানো
নবায়নযোগ্য শক্তি: সৌর শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি
ঘ) বাস্তব পদাঙ্ক (Ecological Footprints)
সংজ্ঞা:
একটি ব্যক্তি, সমাজ বা দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর চাপ বা খরচ কতটুকু — সেটাই হচ্ছে ইকোলজিক্যাল ফুটপ্রিন্ট।
পরিমাপ:
-
ব্যবহৃত ভূমি, পানি, জ্বালানি ইত্যাদির ভিত্তিতে
-
ইউনিট: Global hectares (gha)
ব্যবহৃত ভূমি, পানি, জ্বালানি ইত্যাদির ভিত্তিতে
ইউনিট: Global hectares (gha)
প্রভাব:
-
বেশি ফুটপ্রিন্ট মানে বেশি প্রাকৃতিক সম্পদ ক্ষয়
-
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের টেকসই উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি
বেশি ফুটপ্রিন্ট মানে বেশি প্রাকৃতিক সম্পদ ক্ষয়
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের টেকসই উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি
হ্রাসের উপায়:
-
পুনর্ব্যবহার (Recycling)
-
নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার
-
সচেতন জীবনধারা
পুনর্ব্যবহার (Recycling)
নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার
সচেতন জীবনধারা
১. গণনা পদ্ধতি
ভূমি ব্যবহার: আবাসিক, কৃষি, বন
কার্বন পদাঙ্ক: জ্বালানি ব্যবহার
২. বৈশ্বিক তথ্য
দেশ | পদাঙ্ক (gha) | বিশ্ব গড়ের তুলনায় |
---|---|---|
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | ৮.১ | ৩ গুণ বেশি |
ভারত | ১.২ | অর্ধেকেরও কম |
৩. পদাঙ্ক কমানোর উপায়
পরিবহন: সাইকেল বা গণপরিবহন ব্যবহার
খাদ্য: স্থানীয় ও মৌসুমী ফল-সবজি খাওয়া
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন:
কার্বন ক্রেডিট কী? → দূষণ কমানোর জন্য আর্থিক সুবিধা
ঙ) পরিবেশ আন্দোলনের উৎস
উৎপত্তি:
-
১৯৬০ ও ৭০-এর দশকে পরিবেশ দূষণ বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে পরিবেশবাদ বিকাশ লাভ করে।
লক্ষ্য:
-
প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ
-
পরিবেশ-সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়ন
-
জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ
১. বৈশ্বিক আন্দোলন
আন্দোলন | বছর | প্রভাব |
---|---|---|
সাইলেন্ট স্প্রিং | ১৯৬২ | DDT নিষিদ্ধ |
কোপেনহেগেন শিখর | ২০০৯ | জলবায়ু পরিবর্তন আলোচনা |
২. ভারতীয় আন্দোলন
নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন: মেধা পাটেকরের নেতৃত্ব
অপেরেশন কচ্ছ: গুজরাটে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ
৩. বর্তমান প্রবণতা
ফ্রাইডেস ফর ফিউচার: গ্রেটা থুনবার্গের নেতৃত্ব
প্লাস্টিক মুক্তি: একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ
পরীক্ষার কৌশল
১. গুরুত্বপূর্ণ তারিখ
৫ জুন: বিশ্ব পরিবেশ দিবস
২২ এপ্রিল: পৃথিবী দিবস
২. সংবিধান সংশ্লিষ্ট ধারা
ধারা ৪৮A: পরিবেশ সংরক্ষণের নির্দেশ
ধারা ৫১A(g): নাগরিকের কর্তব্য
৩. আন্তর্জাতিক চুক্তি
চুক্তি | বছর | উদ্দেশ্য |
---|---|---|
মন্ট্রিয়াল প্রোটোকল | ১৯৮৭ | ওজোন স্তর রক্ষা |
প্যারিস চুক্তি | ২০১৫ | গ্রিনহাউস গ্যাস নিয়ন্ত্রণ |
ইতিহাসের কিছু মাইলফলক:
-
1962: Rachel Carson-এর Silent Spring গ্রন্থ
-
1972: Stockholm Conference (প্রথম আন্তর্জাতিক পরিবেশ সম্মেলন)
-
1987: Brundtland Report – টেকসই উন্নয়নের ধারণা
-
1992: Earth Summit, Rio de Janeiro