বাস্তুতন্ত্র (Ecosystem)

 


বাস্তুতন্ত্র (Ecosystem)

১. বাস্তুতন্ত্রের ধারণা ও সংজ্ঞা

বাস্তুতন্ত্র (Ecosystem) হলো জীবমণ্ডলের একটি কার্যকরী একক, যেখানে জীব (Biotic) ও জড় (Abiotic) উপাদানগুলি পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। এই ধারণাটি প্রথম প্রস্তাব করেন ব্রিটিশ বাস্তুবিদ এ. জি. ট্যান্সলে (1935)।

মৌলিক বৈশিষ্ট্য:

  • পারস্পরিক নির্ভরশীলতা: উদ্ভিদ, প্রাণী ও পরিবেশ একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

  • গতিশীল ভারসাম্য: প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট কারণে পরিবর্তনশীল।

  • স্বয়ংসম্পূর্ণতা: সৌরশক্তি ব্যবহার করে খাদ্য উৎপাদন (স্বপোষী জীবের মাধ্যমে)।


২. বাস্তুতন্ত্রের উপাদানসমূহ

ক. জড় উপাদান (Abiotic Components)

উপাদানভূমিকাউদাহরণ
সূর্যালোকসালোকসংশ্লেষণের জন্য শক্তির উৎসPAR (Photosynthetically Active Radiation)
জলজীবনের জন্য অপরিহার্য, বিপাক ক্রিয়ায় সাহায্যবৃষ্টি, নদী, ভূগর্ভস্থ জল
মাটিউদ্ভিদের মূলের আশ্রয় ও পুষ্টি সরবরাহবালি, কাদা, হিউমাস
তাপমাত্রাজীবের বেঁচে থাকার সীমা নির্ধারণবিষুবীয় অঞ্চলে উচ্চ তাপমাত্রা
বায়ুশ্বাস-প্রশ্বাস ও গ্যাসীয় চক্রের বাহকO₂, CO₂, N₂

খ. জীব উপাদান (Biotic Components)

(১) উৎপাদক (Producers/Autotrophs)

  • ভূমিকা: সূর্যালোক ব্যবহার করে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় জৈব খাদ্য তৈরি (যেমন—গাছ, শৈবাল)।

  • উদাহরণ:

    • স্থলজ: আম, বটগাছ।

    • জলজ: ফাইটোপ্লাঙ্কটন, কেল্প।

(২) ভোক্তা (Consumers/Heterotrophs)

প্রকারখাদ্যাভ্যাসউদাহরণ
প্রাথমিক ভোক্তা (Herbivores)শুধু উদ্ভিদ খায়হরিণ, গরু, খরগোশ
দ্বিতীয় ভোক্তা (Carnivores)প্রাথমিক ভোক্তাকে খায়ব্যাঙ, সাপ, মাকড়সা
তৃতীয় ভোক্তাদ্বিতীয়ক ভোক্তাকে খায়বাঘ, ঈগল, হাঙর
সর্বভুক (Omnivores)উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয় খায়মানুষ, শূকর, কাক

(৩) বিয়োজক (Decomposers)

  • ভূমিকা: মৃত জৈব পদার্থ পচিয়ে সরল অজৈব পদার্থে পরিণত করে (যেমন—ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক)।

  • গুরুত্ব: মাটিতে পুষ্টি ফেরত দেয় (N, P, K)।


৩. শক্তি প্রবাহ ও ট্রফিক স্তর

শক্তির উৎস:

সূর্য → উৎপাদক (1st Trophic Level) → ভোক্তা (2nd, 3rd Level) → বিয়োজক।

১০% নীতি:

  • লিন্ডেম্যানের সূত্র (1942): এক ট্রফিক লেভেল থেকে পরের স্তরে মাত্র ১০% শক্তি স্থানান্তরিত হয়।

  • শক্তি হারানোর কারণ:

    • শ্বসনে তাপ হিসাবে ক্ষয় (90%)।

    • অবশিষ্ট অংশ মল-মূত্র বা অব্যবহৃত অংশে থাকে।

খাদ্যশৃঙ্খল (Food Chain):

  • ঘাস → টিড্ডি পোকা → ব্যাঙ → সাপ → ঈগল

  • প্রকারভেদ:

    • পাচনশৃঙ্খল (Grazing): উদ্ভিদ থেকে শুরু (উদা: ঘাস → গরু → মানুষ)।

    • ডিট্রিটাস শৃঙ্খল: মৃত জৈব পদার্থ থেকে শুরু (উদা: পাতা → কেঁচো → ব্যাঙ)।

খাদ্য জাল (Food Web):

  • একাধিক আন্তঃসংযুক্ত খাদ্যশৃঙ্খল-এর জটিল নেটওয়ার্ক।

  • গুরুত্ব: কোনো একটি প্রজাতি বিলুপ্ত হলেও বাস্তুতন্ত্র টিকে থাকে।


৪. বায়ো-জিওকেমিক্যাল চক্র (Bio-geochemical Cycles)

ক. কার্বন চক্র:

  • প্রধান ধাপ:

    1. সালোকসংশ্লেষণ: CO₂ → গ্লুকোজ (উদ্ভিদ)।

    2. শ্বসন: গ্লুকোজ → CO₂ (সকল জীব)।

    3. জ্বলন: জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ালে CO₂ নির্গত হয়।

  • মানবীয় প্রভাব: CO₂ বৃদ্ধি → গ্রিনহাউস প্রভাব → জলবায়ু পরিবর্তন।

খ. নাইট্রোজেন চক্র:

ধাপপ্রক্রিয়াঅণু
স্থিরীকরণN₂ → NH₃ (ব্যাকটেরিয়া/বাজ)N₂ → NH₃
নাইট্রিফিকেশনNH₃ → NO₃ (নাইট্রোসোমোনাস)NH₃ → NO₃⁻
ডিনাইট্রিফিকেশনNO₃ → N₂ (সিউডোমোনাস)NO₃⁻ → N₂

গ. জল চক্র:

  • বাষ্পীভবন → ঘনীভবন → অবক্ষেপণ (বৃষ্টি) → ভূ-পৃষ্ঠে প্রবাহ → পুনরায় বাষ্পীভবন


৫. বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য ও হুমকি

প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষাকারী:

  • প্রজাতি বৈচিত্র্য: বেশি প্রজাতি = বেশি স্থিতিশীলতা।

  • নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া: শিকারি-শিকারের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ (যেমন—বাঘ ↑ → হরিণ ↓ → ঘাস ↑)।

মানবসৃষ্ট হুমকি:

  • বন উজাড়: কার্বন চক্র বিঘ্নিত।

  • জল দূষণ: অ্যাকুয়াটিক খাদ্যজাল ধ্বংস।

  • জলবায়ু পরিবর্তন: প্রজাতির বাসস্থান হারানো।


৬. সংরক্ষণ কৌশল

  • জৈব চাষ: রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানো।

  • অরণ্যায়ন: CO₂ শোষণের জন্য গাছ লাগানো।

  • বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ: জাতীয় উদ্যান ও অভয়ারণ্য তৈরি।

#WBSLST2025, #SLSTExam2025, #WBTeacherRecruitment, #SLSTPreparation,  #WBSLSTUpdates,  #SLSTStudyPlan , #SLSTExamReady, #SLSTSuccessTips, #WBSLSTJourney, #SLSTMotivation, #MissionSLST, #StudyHardTeachHard, #SLSTWarriors, #SLSTFinalLap, #CrackSLST2025, #SLSTGoalAchieved

 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post