সুলতানি ও বিজয়নগর সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক কাঠামোর বিশ্লেষণ
সুলতানি আমলের প্রশাসনিক কাঠামো (1206-1526 খ্রিস্টাব্দ)
কেন্দ্রীয় প্রশাসন:
সুলতান: সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর, শরিয়া আইনের রক্ষক
উজির/ওয়াজির: প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকায়, রাজস্ব ও প্রশাসনিক দায়িত্ব
দিওয়ান-ই-আরিজ: সামরিক বাহিনীর দায়িত্ব
দিওয়ান-ই-ইনশা: রাজকীয় চিঠিপত্র ও দলিল প্রস্তুত
প্রাদেশিক প্রশাসন:
ইকতা ব্যবস্থা: ভূমি বরাদ্দের মাধ্যমে সামরিক বেতন পরিশোধ
মুকতি/ওয়ালি: প্রাদেশিক গভর্নর
শিকদার: আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী
আমিল: রাজস্ব সংগ্রহকারী
রাজস্ব ব্যবস্থা:
খরাজ: কৃষকদের থেকে ভূমি কর (উৎপাদনের 1/3 থেকে 1/2)
জিজিয়া: অমুসলিমদের উপর ধর্মীয় কর
খামস: যুদ্ধলব্ধ সম্পদের 1/5 অংশ
ন্যায়বিচার ব্যবস্থা:
কাজি-উল-কুজাত: প্রধান বিচারপতি
দিওয়ান-ই-মজালিম: জনগণের অভিযোগ শোনার বিশেষ আদালত
বিজয়নগর সাম্রাজ্যের প্রশাসন (1336-1646 খ্রিস্টাব্দ)
কেন্দ্রীয় প্রশাসন:
রাজা: দৈবিক অধিকারী, কিন্তু মন্ত্রিপরিষদ দ্বারা সীমিত
মহাপ্রধান: প্রধানমন্ত্রী, 18টি দপ্তর তত্ত্বাবধান
রায়াসম: মন্ত্রিপরিষদ (8 জন সদস্য)
প্রাদেশিক ব্যবস্থা:
মণ্ডলম: প্রদেশ (6টি প্রধান মণ্ডলম)
নাডু: জেলা
গ্রাম: স্বায়ত্তশাসিত পঞ্চায়েত দ্বারা পরিচালিত
অর্থনৈতিক ব্যবস্থা:
ভূমি রাজস্ব: উৎপাদনের 1/6 থেকে 1/4 অংশ
সেচ কর: জল ব্যবহারের জন্য অতিরিক্ত কর
বাণিজ্য শুল্ক: বিদেশি বাণিজ্যে 5-10%
সামরিক সংগঠন:
নায়কর ব্যবস্থা: সামরিক কমান্ডারদের ভূমি বরাদ্দ
হাতি বাহিনী: 10,000 যুদ্ধহাতি
তোপখানা: পর্তুগিজদের কাছ থেকে প্রাপ্ত কামান
ন্যায়বিচার:
ধর্মস্থান: মন্দির ভিত্তিক বিচার ব্যবস্থা
রাজকীয় আদালত: গুরুতর অপরাধের বিচার
তুলনামূলক বিশ্লেষণ:
বিষয় | সুলতানি আমল | বিজয়নগর আমল |
---|---|---|
কেন্দ্রীয় ক্ষমতা | কেন্দ্রীভূত | বিকেন্দ্রীকৃত |
রাজস্ব উৎস | জিজিয়া কর গুরুত্বপূর্ণ | কৃষি ও বাণিজ্য উপর নির্ভরশীল |
সামরিক ব্যবস্থা | ইকতা ভিত্তিক | নায়কর ব্যবস্থা |
স্থানীয় শাসন | শিকদার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত | গ্রাম পঞ্চায়েত স্বায়ত্তশাসিত |
প্রশাসনিক উদ্ভাবন:
সুলতানি: ফার্সি ভাষায় দলিলপত্র, ডাক ব্যবস্থা (ডাক চৌকি)
বিজয়নগর: জল সরবরাহ ব্যবস্থা (হিরিয়া কানাল), কৃষি গবেষণা কেন্দ্র
ঐতিহাসিক প্রভাব:
সুলতানি: মুঘল প্রশাসনের ভিত্তি তৈরি করে
বিজয়নগর: দক্ষিণ ভারতের স্থানীয় শাসন পদ্ধতি সংরক্ষণ